রেডিও টেলিভিশন, ভিডিও কিংবা অন্য কোনো স্থানে যে গান হয়, তা শ্রবণ করা হতে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে অশ্লিল গান থেকে, যাতে বাদ্যও বাজানো হয়।
গান-বাজনা থেকে বিপরীত কাজ হলো আল্লাহর যিকির ও কুরআন তেলাওয়াত করা। বিশেষ করে সূরা আল-বাকারা তেলাওয়াত করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الذِيْ يَقْرَأُ فِيْهِ الْبَقَرَةَ» )رواه مسلم(
“যে বাড়িতে সূরা আল-বাকারা তেলাওয়াত করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পালায়ন করে।” (সহীহ মুসলিম)
ইসলামের
পথে এসো..Islamer Pothe Asho
|
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُم مَّوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٞ لِّمَا فِي ٱلصُّدُورِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٧ ﴾ [يونس: ٥٧]
“হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদেরর কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী ও শামায়েল (আখলাক) পাঠ করা এবং সাথে সাথে সাহবায়ে কেরামের জীবনীও অধ্যায়ন করা।
যে সমস্ত গান শ্রবণ করা জায়েয:
ঈদের গান শ্রবণ করা: এ হাদীসটি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত:
«دَخَلَ رَسُولُ اللهِ صَلي الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا جَارِيَتَانِ تَضْرِبَانِ بِدَفَّيْنِ (وَفِي رِوَايَةٍ عِنْدِي جَارِيَتَانِ تُغَنِّيَانِ) فَانْتَهَرَهُمَا ابُوْبَكرٍ فَقالَ صَلي الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعْهُنَّ فَانَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيْدًا وَإنَّ عِيْدَنَا هَذا الْيَوْم» (رواه البخاري)
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন। তখন তাঁর ঘরে দুই বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। অন্য রেওয়ায়েতে আছে গান করছিল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের ধমক দেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাদের গাইতে দাও। কারণ, প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন।” (সহীহ বুখারী)
দফ বাজিয়ে বিয়ে প্রচারের জন্য গান গাওয়া আর তাতে মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করা। দলীল: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«فَصْلُ ما بَيْنَ الْحَلَالِ وَالْحَرَمِ ضَرْبُ الدَّفِ وَالصَّوْتُ فِي النِّكَاحِ» (رواه أحمد)
“বিয়ে হারাম বা হালাল হওয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো দফের বাজনা ও শব্দ করে জানিয়ে দেওয়া।” [মুসনাদে আহমাদ] যাতে এর দ্বারা বুঝা যায় যে, সেখানে বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কাজ করার সময় ইসলামী কোরাস শ্রবণ করা, যাতে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ঐ গানে যদি দো‘আ থাকে। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নামক সাহাবীর কবিতা আবৃত্তি করতেন। আর সাথীদেরকে খন্দকের যুদ্ধের সময় পরিখা খনন করতে উদ্ধুদ্ধ করতেন এই বলে যে, “হে আল্লাহ কোনোই জীবন নেই আখেরাতের জীবন ব্যতীত। তাই আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দিন। তখন আনছার ও মুহাজিনগণ উত্তর দিলেন: আমরাই হচ্ছি ঐ ব্যক্তিবর্গ যারা রাসূলের নিকট বাই‘আত করেছি জিহাদের জন্য, সর্বদাই যতদিন আমরা জীবিত থাকি।”
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে যখন খন্দক (গর্ত) খনন করছিলেন, তখন ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন:
“আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ না করতেন তাহলে আমরা হিদায়াত পেতাম না। আর সিয়ামও পালন করতাম না, আর সালাতও আদায় করতাম না। তাই আমাদের ওপর সাকিনা (শান্তি) নাযিল করুন। আর যখন শত্রুদের মুকাবিলা করব তখন আমাদের মজবুত রাখুন। মুশরিকরা আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে আর যদি তারা কোনো ফিৎনা সৃষ্টি করে, তবে আমরা তা ঠেকাবই।” বারে বারে আবাইনা শব্দটি তারা উচ্চ স্বরে উচ্চারণ করছিলেন।
ঐ সমস্ত কবিতা-গান, যাতে আল্লাহর তাওহীদের কথা আছে অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত ও তার শামায়েল আছে অথবা যাতে জিহাদে উৎসাহিত করা হয় তাতে দৃঢ় থাকতে অথবা চরিত্রকে দৃঢ় করতে উদ্ধুদ্ধ করা হয় অথবা এমন দাওয়াত দেয়া হয় যাতে মুসলিমদের একে অন্যের প্রতি মহব্বত ও সম্পর্ক সৃষ্টি হয় অথবা যাতে ইসলামের মৌলিক নীতি বা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয় অথবা এই জাতীয় অন্যান্য কথা যা সমাজকে উপকৃত করে দীনি আমলের দিকে কিংবা চরিত্র গঠনের জন্য উৎসাহ প্রদান করে।
ঈদের সময় ও বিয়ের সময় কেবলমাত্র মহিলাদের জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে দফ বাজানোর অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। যিকিরের সময় এটার ব্যবহার ইসলাম কখনই দেয় নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিকিরের সময় কখনই তা ব্যবহার করেন নি। তাঁর পরে তাঁর সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম কখনই তা করেন নি। অথচ ভণ্ড সুফি পীররা তা মুবাহ করেছে নিজেদের জন্য। আর যিকিরের দফ বাজানকে তারা সুন্নত বানিয়ে নিয়েছে। বস্তুত তা বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ايَّاكُمْ وَمُحْدَثاتِ الْاُمُوْرِ فاِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بدْعَةٍ وكُلُّ بِدْعًةٍ ضَلالَةٍ» (رواه الترمذي)
“তোমরা দীনের মধ্যে নতুন কোনো সংযোজন করা হতে বিরত থাকো। কারণ, প্রতিটি নতুন সংযোজনই বিদ‘আত। আর প্রতিটি বিদ‘আতই গোমরাহী।” (তিরমিযী)
সমাপ্ত
পোষ্টটি উপকারী মনে হলে অব্যশয় শেয়ার করবেন
No comments:
Post a Comment
Thank You