লোকসমাজে প্রচলিত অনেক খেলাধুলার সাথেই হারাম জড়িত আছে। দাবা এমনই একটি খেলা। দাবা থেকে আরো অনেক রকম খেলার প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। যেমন, পাশা খেলা প্রভৃতি। জুয়া ও বাজির দ্বার উন্মোচনকারী এ দাবা সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন,
«مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ، فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِي لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ»
![]() |
ইসলামের পথে এসো..Islamer Pothe Esho |
“যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে যেন শুকরের রক্ত-মাংসে স্বীয় হাত রঞ্জিত করে”।
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ»
“যে ব্যক্তি দাবা খেলে, সে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধানকে অমান্য করে”।
সুতরাং দাবা ও তার আনুসঙ্গিক খেলা যেমন তাস, পাশা, ফ্লাশ ইত্যাদি সম্বন্ধে অবশ্যই শরী‘আতের আদেশ মানতে হবে।
৬৭. কোনো মুসলিমকে অভিশাপ দেওয়া এবং যে অভিশাপ পাওয়ার যোগ্য নয় তাকে অভিশাপ দেওয়া
অনেকেই রাগের সময় জিহবাকে সংযত রাখতে পারে না। ফলে বেদিশা হয়ে লা‘নত করে বসে। তাদের লা‘নতের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। মানুষ, পশু, জড় পদার্থ, দিন-ক্ষণ এমনকি নিজের সন্তান-সন্ততিদেরও তারা লা‘নত করে বসে। দেখা যায়, স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে লা‘নত করে, আবার স্ত্রীও স্বামীকে লা‘নত করে। এটি একটি মারাত্মক অন্যায়। আবু যায়েদ সাবিত ইবন দাহহাক আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَمَنْ لَعَنَ مُؤْمِنًا فَهُوَ كَقَتْلِهِ، وَمَنْ قَذَفَ مُؤْمِنًا بِكُفْرٍ فَهُوَ كَقَتْلِهِ»“যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে লা‘নত করল বা কাফের বলে গালি দিল, সে যেন তাকে হত্যা করল’।
মহিলাদেরকে বেশি বেশি লা‘নত করতে দেখা যায়। এজন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের জাহান্নামী হওয়ার নানা কারণের মধ্যে এটি একটি বলে উল্লেখ করেছেন।
এমনিভাবে লা‘নতকারীরা কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারীও হতে পারবে না।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার এ যে, অন্যায়ভাবে লা‘নত করলে তা লা‘নতকারীর ওপর বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। তাতে লা‘নতকারী মূলতঃ নিজকেই আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করার জন্য প্রার্থনাকারী হয়ে দাঁড়ায়।
৬৮. বিলাপ ও মাতম করা
অনেক মহিলা আছে যারা চেঁচিয়ে কাঁদে, মৃতের গুণাবলী উল্লেখ করে মাতম করে, গালে-মুখে থাপ্পড় মারে -এগুলো বড় অন্যায়। অনুরূপভাবে কাপড় ও পকেট ছিঁড়ে, চুল উপড়িয়ে, বেনী বেঁধে বা জড়িয়ে ধরে বিলাপ করাও মহা অন্যায়। এতে আল্লাহর ফায়ছালার প্রতি অসন্তোষ ও বিপদে অধৈর্যের পরিচয় মেলে। যে এমন করবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি লা‘নত করেছেন। এ সম্পর্কে আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، «لَعَنَ الْخَامِشَةَ وَجْهَهَا، وَالشَّاقَّةَ جَيْبَهَا، وَالدَّاعِيَةَ بِالْوَيْلِ وَالثُّبُورِ»
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমণ্ডল ক্ষত-বিক্ষতকারিণী, পকেট বিদীর্ণকারী এবং দুর্ভোগ ও ধ্বংস প্রার্থনাকারিণীর ওপর লা‘নত করেছেন”।
ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
«لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الخُدُودَ، وَشَقَّ الجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ»
“যে গালে থাপ্পড় মারে, পকেট ছিঁড়ে ফেলে ও জাহেলিয়াতের রীতি-নীতির প্রতি আহ্বান জানায় সে আমাদের দলভুক্ত নয়”।
তিনি আরো বলেছেন,
«النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا، تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ، وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ»
“মাতমকারিণী মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করলে কিয়ামত দিবসে তাকে আলকাতরার পাজামা ও খোস-পেঁচড়াযুক্ত বর্ম পরিহিতা অবস্থায় তোলা হবে”।
সুতরাং কারো মৃত্যু বা বিপদে বিলাপ-মাতম ও আহাজারী করা বড়ই অন্যায়।
৬৯. মুখমণ্ডলে আঘাত করা ও দাগ দেওয়া
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنِ الضَّرْبِ فِي الْوَجْهِ، وَعَنِ الْوَسْمِ فِي الْوَجْهِ»
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমণ্ডলে আঘাত করতে এবং মুখমণ্ডলে দাগ দিতে নিষেধ করেছেন”।
মুখমণ্ডলে আঘাতের বিষয়টি কিছু মাতা-পিতা ও শিক্ষকদের থেকে বেশি প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা সন্তানদের বা ছাত্রদের শাসন করার জন্য হাত কিংবা অন্য কিছু দ্বারা মুখমণ্ডলে মেরে থাকে। অনেকে বাড়ীর চাকরদের সাথে এরূপ করে থাকে। এতে আল্লাহ তা”আলা যে চেহারার বদৌলতে মানুষকে সম্মানিত করেছেন তাকে অমর্যাদা করার সাথে সাথে অনেক সময় মুখমণ্ডলের কোনো একটি ইন্দ্রিয় অকেজো হয়ে পড়তে পারে। ফলে অনুশোচনা ছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে কিসাস দেওয়া লাগতে পারে।
পশুর মুখমণ্ডলে দাগ দেওয়া কাজটি পশু মালিকদের সাথে জড়িত। তারা স্ব স্ব পশু চেনা ও হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়ার জন্য পশুগুলোর মুখে দাগ দিয়ে থাকে। এটা হারাম। এতে পশুর চেহারা ক্ষত করা ছাড়াও তাকে কষ্ট দেওয়া হয়। কেউ যদি দাবী করে যে, এরূপ দাগ দেওয়া তাদের গোত্রের একটি রীতি এবং গোত্রের বিশেষ চিহ্ন, তাহলে এটুকু করার অবকাশ থাকতে পারে যে শরীরের অন্য কোথাও দাগ বা কোনো চিহ্ন দিবে; মুখমণ্ডলে নয়।
ইসলামের পথে এসো..Islamer Pothe Esho
পোষ্টটি উপকারী মনে হলে অব্যশয় শেয়ার করবেন
No comments:
Post a Comment
Thank You